০৭:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
                       

নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে অস্পষ্টতা

মাছুম বিল্লাহ
  • প্রকাশ: ০২:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪
  • / ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে


Google News
বিশ্লেষণ-এর সর্বশেষ নিবন্ধ পড়তে গুগল নিউজে যোগ দিন

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এবং স্বল্পমূল্যে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নতুন কারিকুলাম চালুর পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছেনা আর এর পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে। কারিকুলাম নিয়ে যত আলোচনা হচিছলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচনা হলো পাবলিক পরীক্ষা কিভাবে গ্রহন করা হবে, তার স্বরূপ কি হবে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে  প্রতীকের মাধ্যমে যে মূল্যায়ন সেটি কিভাবে অ্যাডজাস্ট করা হবে। প্রথমেই বলা প্রয়োজন যে, এত বিশাল আকৃতির পরিবর্তন যেখানে করা হলো সেখানে পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে কর্র্তৃপক্ষ খুব একটা চিন্তা যে করেননি সেটি কিন্তু বার বার প্রকাশ পাচেছ। সচেতন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বার বার তুলছেন বিভিন্ন ফোরামে কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা একটি কথাটি শুনে আসছি যে, ফরমাল কোনো লিখিত পরীক্ষা হবে না, সেটির মাধ্যমে যে মূল্যায়ন সেটি সঠিক নয়। লিখিত পরীক্ষা হলেই বাজারে নোট-গাইডের ব্যবসা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু  ফরমাল কোন লিখিত পরীক্ষা না থাকায়  শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করছে না।শিক্ষার্থীরা কোন বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই।  একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাইল্ড বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকতে হয়, পরীক্ষা বা পড়াশুনার অত্যাধিক চাপ নয় তবে এক ধরনের তাগিদের মধ্যে থাকতে হয় কারন এই বয়সে নিজেরা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। তাছাড়া প্রতিযোগিতা যাতে অসুস্থতা সৃষ্টি  না করে সেটিকে কিভাবে পরিমার্জন করে সুস্থ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন ছিল।  আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে মাঠে কাজ করি, শিক্ষা বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করি তারা কিন্তু বারবার বলে আসছি নতুন কারিকুলাম লিখিতভাবে খুবই ভাল কিন্তু বাস্তবের সাথে এর মিল অনেক কম। এই কারিকুলামকে অর্থবহ করতে হলে কমপক্ষে ৫০শতাংশ লিখিত পরীক্ষা থাকতেই হবে। আমরা যতই বলি এর সাথে সংশ্লিষ্টরা  ততই শক্ত অবস্থানে চলে যাচিছলেন যে, লিখিত পরীক্ষা মানে মুখস্থ, লিখিত পরীক্ষা মানে প্রাইভেট পড়া, লিখিত পরীক্ষা মানে নোট-গাইডের ব্যবসা। কোনটিই কিন্তু থেমে নেই, শুধু থেমে গেছে শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ, বইপড়া আর বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ।এমনটি হয়েছে বহু শিক্ষার্থী কোন ধরনের বই দেখে পড়তে পারছেনা, এটি আমি নিজে ঘুরে ঘুরে দেখেছি, দক্ষতা আর যোগ্যতা অর্জন তো দূরের কথা। 

নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচেছ। তিনি নতুন কারিকুলামে মূল্যায়নসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে একাধিক মিটিং করেছেন এনসিটিবি কর্মকর্তাদের সাথে। শিক্ষাবিদ, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ, অসন্তোষ এবং লিখিত পরীক্ষা যুক্ত করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের প্রথম দিনেই তিনি  নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নপদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গত ১৪জানুয়ারি ২০২৪  শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষাবর্ষ মাত্র শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাজগুলোও শুরু হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা মনে হয় , তাহলে পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি  ২০২৪ শিক্ষামন্ত্রী এনসিটিবি এবং শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে  তিনি মূল্যায়ণ পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে জন-অসন্তোষ নিরসনে তা যাচাই বাছাইয়ের পরামর্শ দেন। এরপরই  ফেব্রুয়ারি মাসে  মূল্যায়নপদ্ধতি ও কারিকুলাম নিয়ে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি গঠনের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন কমিটি একটি সুপারিশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা রাখতে হবে এবং এই দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রাখতে বলেছে। তবে,কারিকুলামের উপর বই যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে কতটা সেটি সম্ভব হবে সেটি একটি প্রশ্ন।হাতে-কলমে যে মূল্যায়ণ হবে, তার ওয়েটেজ বা গড় ভারিত্ব হবে ৫০শতাংশ। অন্যদিকে লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৫০ শতাংশ।  চূড়ান্ত মূল্যায়নে সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টের ৭ পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদশির্তার সূচক অভিভাবক ও অংশজনের অবহিত করারও সুপারিশ করেছে কমিটি। এই সাত পর্যায়ের স্কেল সম্পর্কে বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পুরোপুরি অন্ধকারে। কবে সবগুলো আলোর মতো স্পষ্ট হবে সেই আশায়ই সংশ্লিষ্টরা বসে আছেন। ৫০শতাংশ লিখিত পরীক্ষার কথা বলা হলো ২৬ মার্চ ২০২৪, এপ্রিলেও একইকথা চলছে। কিন্তু ১৪ মে ২০২৪ বাংলাদেশের  প্রায় সমস্ত পত্রিকায় দেখলাম ১৩মে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভায় পাবলিক পরীক্ষায় মূল্যায়ন  নিয়ে আলোচনা ও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় যে, নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হতে যাচেছ ৬৫শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫শতাংশ।— কার্যক্রম বলতে বোঝানো হচেছ অ্যাসইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। আরও সহজ করে বললে হাতে-কলমে কাজ।  সেখানে উপস্থিত ছিলেন  ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও এনসিটিবির কর্মকর্তাগন। মাননীয় কর্মকর্তাদের নিকট সবিনয় জানতে চাই যে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন আসলে কোন পদ্ধতিটি অবলম্বন করবেন, তাদের কি আসলেই কনফিউজড হওয়ার কথা নয়?  ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এই ৬৫শতাংশ পরীক্ষার মার্কিং কি রকম হবে। সেটি কি মার্কিংই থাকবে, নাকি গ্রেডিং হবে নাকি নম্বর সিম্বলে রূপান্তরিত করা হবে? এ আলোচনা কিন্তু  দেখলাম সেখানে অনুপস্থিত। আবার এই নিয়ে কথা হবে, কয়েক মাস কেটে যাবে তখন সংশ্লিষ্টরা আবার কিছু  খসড়া সিদ্ধান্ত নেবেন। এভাবে সময় তো বসে থাকছে না। স্কুলগুলোর ও শ্রেণিকক্ষগুলোর বাস্তব অবস্থা জানার জন্য আপনারা একটু গোপনে গিয়ে যদি দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন পড়াশুনার আসলে কি হাল হয়েছে। অনেকে বলছেন যে, এগুলো তো কোন সিদ্ধান্ত নয়, শুধু সময় ক্ষেপন!

যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম চালুর পর এ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের যেসব আলোচনা তার সবই লিখিতভাবে অর্থাৎ থিওরিটিক্যালি পজিটিভ, ভীষন পজিটিভ। যেসব কথা পরিকল্পনায় যেভাবে লেখা আছে সেগুলো অবশ্যই সুন্দর, সেটি নিয়ে আমরা কতটা আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে পারি?  আমরা বলছি বাস্তব কথা নিয়ে। লিখিত কোন পরীক্ষাই তারা রাখবেন না। পাবলিক পরীক্ষা কিভাবে হবে সেটি নিয়ে যে কারিকুলামে বা ব্যবস্থায় চিন্তা করা হয়না সেটি যে কত গলদে ভর্তি তার প্রমাণ আমরা বার বার পাচিছ। এখন তারা বলছেন এক ঘন্টার একটি লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে । তবে,  বার বার নিজেদের স্থানটি  ধরে রাখার জন্য বলছেন যে, সেটি আগের পরীক্ষার মতো হবেনা। তারা যতগুলো কথা বলতেন তার মধ্যে একটি ছিল পরীক্ষার কোন টেনশন শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবেনা। পুরনো কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো অর্থাৎ দশটি বিষয় হলে একজন শিক্ষার্থীকে ত্রিশ ঘন্টার পরীক্ষা দিতে হতো, এখন দিতে হবে প াশ ঘন্টার অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের পাঁচ ঘন্টার পরীক্ষা দিতে হবে। অনেক টেনশনমুক্ত! শিক্ষার্থীরা যখন এসএসসি পরীক্ষার সেন্টারে যাবে তাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্টারে থাকতে হবে, এই দীর্ঘ সময় তারা কি খাবেন? কোথায় খাবেন? এ চিন্তা কিন্ত কর্তৃপক্ষ এখনও করেননি। আমার সাথে দু’একজনের কথা হয়েছে। আমি যখন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি  তখন হালকা করে বলা হলো ’ খাওয়ার ব্যবস্থা না হয় করা হবে।’ এতগুলো শিক্ষার্থীর খাবার আয়োজন কে করবে, কিভাবে করা হবে? মূল্যায়নের পরিবর্তে শত শত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর খাওয়ার পেছনে যে আয়োজন ও সময় নস্ট হবে সেটি হতে পারে পিকনিক, কোন মূল্যায়ণ নয়। শুধু তাই নয়, এত শত শত কিংবা হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা পাঁচ ঘন্টা ধরে এক্্রপেরিমেন্ট করবেন, পরীক্ষা দিবেন তাদের সুপারভাইজ করার মতো এতো জনবল কি ঐ সেন্টারের আছে? বিষয়টি কিন্তু আরও এক জায়গায় ধোয়াশা রাখা হলো। পরীক্ষা কি সেন্টারে হবে না পাশ^বর্তী কোন স্কুলে হবে? বোর্ডের পরীক্ষা নিতে হবে, লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে  এসব দাবীর প্রেক্ষিতে  কর্তৃপক্ষের এমন উত্তর। আমরা কিন্তু এখনও স্পষ্ট করে বুঝতে পারছিনা যে,  পাবলিক পরীক্ষা আসলে কোথায় হবে এবং কিভাবে হবে।

প্রথম বলা হলো  পাশের বিদ্যালয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে। পাশের বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হওয়া মানে সেটি কোন মূল্যায়ন নয়। দুই বিদ্যালয়ের মধ্যে যদি রেশারেশি থাকে, শত্রুতা থাকে তাহলে  মূল্যায়ান একরকম হবে, আবার যদি মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যন্ডিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয় সেটিও কোন মূল্যায়ন নয়। বিষয়টি কিন্তু স্পষ্ট করা হয়নি। আবার যখন আলোচনা হলো তখন বলা হচেছ পরীক্ষা হবে সেন্টারে। একটি সেন্টার পরীক্ষার্থী থাকে কয়েক হাজার। প্রতিটি পরীক্ষার্থী যদি ৫ঘন্টা পর্যন্ত পরীক্ষা দেয় তাহলে সেটি মূল্যায়ণ করা বা অবজার করার জন্য এত টিচার কোথায় পাওয়া যাবে? এ চিন্তাও কিন্তু তারা করেনি।প্রথম বলা হলো বিদ্যালয় সবকিছু করবে। তারপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে বোর্ডগুলোর ভূমিকা কি হবে? এসব প্রশ্ন ওঠার পরে তারা বলছেন বোর্ড থেকেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। আবার সাথে সাথে বলা হচেছ পরীক্ষা আগের মতো হবেনা। পুরো বিষয়টিতে কিন্তু গোলমাল লেগে আছে। যখনই তাদের প্রশ্ন করা হয় তখন তারা সাথে সাথে একটি উত্তর দিয়ে দেন , তারা কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করার সময় সেগুলো বলছেন না অর্থাৎ এগুলো তাদের চিন্তায় আছে কিনা প্রশ্ন থেকে যাচেছ।  

প্রথম বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিকে ধাপে ধাপে কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ বাড়ানো হবে। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে কার্যক্রমের বিষয়বস্থুর সঙ্গে মিল রেখে অর্থাৎ প্রশ্ন হবে দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রেখে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন এনসিটিবি দ্রুত আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করলে এটিকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পূর্বনির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় তোলা হবে।ঐ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময়টি পাাঁচ ঘন্টাই রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাই রাখা হচেছ। তারা কিন্তু পরীক্ষার নামসহ সবই উল্টে দিতে চাচিছলেন  এবং বাস্তবতার কথা অনেকক্ষেত্রে চিন্তা না করে অনেককিছু বলেই যাচেছন, বিদ্যালয় ও শিক্ষার করুণ দশার কথা কিন্তু চিন্তা করছেন না। আমরা জানি দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেটির নাম  ১৯৬২ সাল থেকেই    মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট( এসএসসি) পরীক্ষা নামে পরিচিত।  কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা নিজেদের জায়গাটি ঠিক রাখার জন্য বলেই যাচেছন শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়নের ধরন এখনকার মতো থাকছেনা। কিভাবে থাকছে তাও ঠিকমতো বলছেন না, যা বলছেন তার অনেক কিছুই  বাস্তবের সাথে  মিল নেই, দেশের কনটেস্টের সাথে মিল নেই আর লক্ষ লক্ষ শিক্ষক তো বুঝতেই পারছেনা, তারা তালগোল পাকিয়ে বসে আছেন। 

আন্তর্জাতিক পরীক্ষা  ’ ও’ লেভেল, ’ এ’ লেভেলে’ লিখিত পরীক্ষা আছে, পিসায় লিখিত পরীক্ষা আছে, অন্তর্জাতিক অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ’ আইইএলটিস’–এগুলোর সবকিছুর উপরে উঠে আমাদের কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা বলেই যাচেছন ওগুলো কোন পরীক্ষাই নয়, ওগুলো শুধু ব্যবসা। ২০২৬সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত পরীক্ষা না থাকায় সেটি কোন পদ্ধতিতে হবে তার কাঠামো এখনো ঠিক না হওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বুঝতে উঠতে পারছেন না।পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক না হওয়ায় দশম শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজও আটকে আছে। অথচ ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবইয়ে পড়াশুনা করবে।সেটিও দেখছি খুব তাড়াহুড়ো করে করতে হবে। তাড়াহুড়ো করা মানে ভুলের ছড়াছড়ি। এখানে ভাল বা মন্দ নিয়ে কথা নয়, কথা হচেছ আমরা হঠাৎ করে পূর্বের কারিকুলামের পুরোটাই পরিবর্তন কেন করলাম, আমরা কি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ তৈরি করছিলাম না? শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাচিছলেন  না? হঠাৎ করে কেন সমস্ত বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে নতুন ডিজাইনের বিল্ডিং করতে নেমে গেলাম? সব বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বিল্ডিং সেগুলোর চেয়ে অনেক অনেক ভাল হবে সেটি নিজেরাই অনুমান করে নিজেরাই এর প্রচারে নেমে গেলাম কিন্তু একটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টাও না করে নতুন বিল্ডিং হওয়ার অপেক্ষায় সবাইকে রেখে দিলাম। পূর্ববর্তী কারিকুলামে আমাদের প্রয়োজন ছিল প্রশ্নপত্রের ধরন পরিবর্তন করা যাতে শিক্ষার্থীরা নিজ থেকে লিখে ফললাভ করে। আর একটি দরকার ছিল প্রাকটিক্যাল কিছু বিষয় যেগুলো একুশ শতকের স্কিলসের সাথে যায় সে ধরনের কিছু চালু করা। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন  ছিল শিক্ষকদের প্রণোদনা বাড়ানো, বেতন ভাতা বাড়ানোর  দিকে জোর দেয়া এবং যারা ইতিমধ্যে শিক্ষকতায় আছেন তাদের একাডেমিক ও পেডাগজিক্যাল দিকগুলো প্রশিক্ষণ , গবেষণা ও পড়াশুনা করানোর মাধ্যমে উন্নত  করার। আর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হচেছ ( যেমন এনটিআরসি-এর মাধ্যমে নিয়োগ) সেগুলো প্রশংসীয় এবং ধীরে ধীরে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে মজা পায়না সেজন্য শুধুমাত্র শিক্ষকরাই দায়ী নন। এসব জায়গায় কাজ করার দরকার ছিল। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে হঠাৎ করে নতুন কারিকুলাম নিয়ে এলাম। যারা এটি বাস্তবায়ন করবেন, যাদের উপর এগুলো প্রয়োগ করা হবে তাদের প্রকৃত অবস্থা ঢাকঢোল না পিটিয়ে  গভীরভাবে ও নিরপেক্ষভাবে  জানার  এবং অবলোকন করার দরকার ছিল। কর্তৃপক্ষ সেেিদক যায়নি। আমরা দেখতে পাচিছ তারা বিষয়টি যেহেতু চালু করেছেন  যে কোন মূল্যে তার বাস্তবায়ন করতেই হবে, তাতে শিক্ষার্থীদের অবস্থা আর শ্কিষার অবস্থা যাই হোক! এর ভাল দিকগুলো তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচেছ। কারিকুলামকে তো আমরা খারাপ বলতে পারিনা। আমাদের দেখতে হবে অনুমিত সিদ্ধান্ত এবং সেগুলোর কথা চিন্তা করেই আত্মতৃপ্তি লাভ করার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার বিষয়টি। ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত একটি শ্রেণিতে তিন-চার পাঁচজন শিক্ষার্থী পড়তে পারে, পড়ে, লিখে, ক্লাসের কাজ করে, বাকীরা তো শ্রেণি অনুযায়ী অনেক পেছনে পড়ে আছে। তাদের প্রয়োজন রেমিডিয়াল ক্লাস, বহু ব্যাকক্লাস।  এ বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়াশোন করছেন তারাই ২০২৬সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তারা এই কারিকুলামে পড়ে কি অর্জন করতে যাচেছন? একটি বিষয় বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে কিছু অর্জন করা যায়। কিন্তু  সেই অনুশীলন তো হচেছনা। 

‘লিখিত পরীক্ষা না থাকায় কারিকুলামটি সমালোচানর মুখে পড়ে, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা অদ্ভূতভাবে নীরব থাকেন। ফলে শিক্ষাক্রম নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন আছে, পাস-ফেল আছে, প্রতিদিনের পাঠদান আছে, পাঠের পূর্বপ্রস্ততি আছে, আবার শিক্ষককেও ফলাফল দিতে হয়। অর্থাৎ ঠিক নিয়ম মেনে সন্তানকে পড়িয়ে বিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে অভিভাবকদের। সব মিলিয়ে অভিভাবকরা সন্তানের পড়াশোনা সম্পর্কে স্বচছ ধারণা  রাখতে পারবেন। মোটকথা, শিক্ষাক্রম নিয়ে সবার ইতিবাচক ভূমিকা তৈরি হবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টো। অর্থাৎ ‘মূল্যায়ন নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম তালগোল পাকিয়ে আছে, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় এখনও অষ্পষ্টতা, ধোঁয়াশা ও অনুমাননির্ভর অনেক কিছুই করছে।‘এই শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের জন্য আটটি উপকরণ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল, যেমন—-কুইজ, প্রতিবেদন, উপস্থাপন, প্রশ্নোত্তর, ব্যবহারিক, স্বমূল্যায়ন, সহপাঠী মূল্যায়ন ও প্রতিবেশি মূল্যায়ন। অর্থাৎ প্রশ্নোত্তর পর্বের নাম দিয়ে লিখিত পরীক্ষাও ছিল। কিন্তু গত দুই বছরে কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে খুশি রাখতে গিয়ে মূল্যায়নের আটটি অংশের মধ্যেই মাত্র কুইজ, প্রতিবেদন ও উপস্থাপন রেখে বাকি পাঁচটিকেই বাদ দিয়ে দেন। এর ফলে মূল্যায়ন থেকে হাতে-কলমের পরীক্ষা বাদ পড়ে।’ ( ভোরের কাগজ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)

কিছু জাতীয় দৈনিকে   দেখলাম, সাংবাদিকগন বলছেন এনসিটিবির মশিউজ্জামানের প্রশ্ন শুনে হতবাক শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত ও পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। হতবাক হওয়ারই কথা। আমরা ফুটবল খেলা দেখি সেখানে প্রতিযোগিতা আছে, ক্রিকেট দেখি সেখানে প্রতিযোগিতা আছে। এভাবে সব কাজেই প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু নতুন কারিকুলামে আমরা বলছি শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিযোগিতা করবে না। একজন খেলোয়াড় যদি জানে যে, তাকে কোন গোল করতে হবেনা, তাহলে সে কতক্ষন খেলবে? সেই দশা হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীদের। বইয়ে বলা হয়েছে তারা আনন্দচিত্তে সারাদিন বইয়ের কাজ করবে কিন্তু পরীক্ষার চাপ তাদের সইতে হবেনা। একটি বিষয়কে বারবার অনুশীলন করতে হয় বিভিন্নভাবে, লিখে, পড়ে, আলোচনা, উপস্থাপনা , রিপোর্ট রাইর্টি ইত্যাদি করে। কিন্তু এখন যেটি হয়েছে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে অনুশীলন করার সময় পাচেছ খুবই কম। একজন শিক্ষককে বিশেষ করে বড় ক্লাসে ডিসিপ্লিস মেনটেইন করতেই সময় চলে যায়, কখন সে শিক্ষার্থীদের দিকে ব্যক্তিগতভাবে খেয়াল রাখবেন।  এখানে আর একটি কথা হচেছ ,শিক্ষকদের নিজস্ব মূল্যায়ন এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয় শহর থেকে গ্রাম, ছোট শহর থেকে বড় শহর , ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে অপেক্ষাকৃত কম মানের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মূল্যায়ন কখনোই এক হবেনা। আর এটি হবেনা বলেই একটি জাতীয় মানদন্ড থাকতে হয়। বর্তমান কারিকুলাযে যে বিশাল গ্যাপটি রয়েছে তার বহু প্রমাণের মধ্যে এটি একটি বড় প্রমাণ। 

এনসিটিবি থেকে বলা হচেছ গতবার (২০২৩ সালে) আমরা পরীক্ষা নিয়েছি তিনদিনে, নাম ছিল অ্যাসেসমেন্ট উৎসব। শিক্ষার্থীরা প্রথম দিন ইনস্ট্রাকশন পেয়েছে, দ্বিতীয় দিন ডেটা প্রসেস করেছে, তৃতীয় দিন ফাইনাল রেজাল্ট দিয়েছে। তিনটি ভাগে কাজটি করেছে। প্রতিদিন ক্লাস রুটিন অনুযায়ী সেগুলে হয়েছে। তবে, পরে আমরা জানতে পারি, একদিনে একাধিক বিষয়ের কাজ করা বেশ কঠিন হয়। তাই এখন আমরা বলেছি, একদিনে একটি বিষয় নিয়ে কাজ হবে। সেদিন আর অন্য বিষয়ে কাজ হবেনা।তার মানে হচেছ এটিও বিনা পরিকল্পনায় হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের উপর শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালানো হচেছ।’নতুন মূল্যায়ন প্রস্তাবনায় শিক্ষার্থীদের একটি এক্্রপেরিমেন্ট দেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা সকাল দশটায় সেটি শুরু করবে। শেষ সময়ে এক ঘন্টা বা বিষয় অনুযায়ী সোয়া ঘন্টাএর একটি লিখিত অংশ থাকবে। বাকি সময় তারা কাজের মধ্যে যাবে। বিষয়টি আগের মতো তিন ঘন্টার লিখিত পরীক্ষা দেয়ার মতো নয়। আরও বলা হয়, স্কুল যেভাবে মূল্যায়ণ করে সেভাবেই করবে। পাবলিক পরীক্ষায় বাইরের মূল্যায়নকারী অর্থাৎ অন্য স্কুলের শিক্ষক থাকবেন। ২০২৩ সালে  ফাইনাল পরীক্ষা যেভাবে হয়েছে, আগামীতে সেভাবেই হবে এবং অবজারভেশন চেকলিস্ট অনুযায়ী শির্ক্ষাথীদের মূল্যায়ন করা হবে। ফাইনালি তার একটি লিখিত রূপ জমা দেবে।’পাবলিক পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির এই পরীক্ষা হবে নিজ নিজ স্কুলে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পাঁচ ঘন্টায় ছয়টি সেশন হবে। চার ঘন্টা ব্যবহারিক। প্রথমে ওরিয়েন্টেশন দেয়া হবে। এই সেশনে একজন শিক্ষার্থীর দলগতভাবে কাজ করতে হবে। আবার প্রত্যেককে এককভাবে ব্যবহারিক কাজ করতে হবে। মূল্যায়নকারী/শিক্ষকদের কাছে তাদের পারদর্শিতা দেখাতে হবে। শেষ এক ঘন্টা তত্ত্বীয় পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষার উত্তরপত্র মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং উচচ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠানো হবে। এ বিষয় দুটোও কিন্তু প্রথমে বলা হয়নি, সাংবাদকিগন প্রশ্ন করার পর অর্থাৎ বোর্ডের কি কাজ কিংবা বোর্ড থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করা না হলে স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করা যাবেনা। তখন কর্তৃপক্ষ বোর্ডের কাজের কথা এভাবে ব্যাখ্যা করেছে।নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মার্কিং( চিহ্নিত) করার নিয়ম থাকবে না। রিপোর্ট ভালো, ’ অর্জনের পথে এবং ’ প্রাথমিক পর্যায়’ এমন তিন ভাগে ফলাফল হবে। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে। খসড়া অনুযায়ী মিডটার্ম ও বার্ষিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে নতুন কারিকুলামের আলোকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে। আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা হবে নিজ স্কুলে। ২০২৪ সালে জুন থেকে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন হবে স্কুলে। এসব উত্তর যখন সাংবাদিকগন জিজ্ঞেস করেন তখন শোনা যায় অর্থাৎ কংক্রিট কোন সিদ্ধান্ত কিন্তু বিদ্যালয় বা শিক্ষকগন পাচেছন না। 

কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা এখন বলছেন নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নে হাতে-কলমে কাজের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও থাকছে। তবে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেওয়া ধরন মুখস্থনির্ভর হবে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, সেগুলো মূলত সৃজনশীল উপায়ে লিখতে হবে। এটি আবার নতুন কি? আমরা তো তাই বলে আসছিলাম যে, শিক্ষার্থীরা যাতে না বুঝে শুধু মুখস্থ করে পাস না করে পরীক্ষায় সেই পদ্ধতিই থাকা প্রয়োজন। আর কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন, লিখিত কোন পরীক্ষা থাকবেনা কারণ সেটি হলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়ণ নাকি হয়না। তারা বলছেন বিভিন্ন শ্রেণিতে বছরজুড়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকবে। এর পাশাপাশি বছরে দুটি সাগগ্রিক মূল্যায়ন হবে। অধিকাংশ শিক্ষক এবং বিদ্যালয় কিন্তু এখনও এই দুই মূল্যায়নের মধ্যে প্রকৃত তফাৎ বুঝতে পারছেন না। 

সবশেষে বলা যায় যে, বর্তমান কারিকুলামটি আদর্শিক, অতি আদর্শিক। আমাদের বর্তমান যে, শিক্ষার প্রেক্ষাপট সেটির আলোকে এটি মানানসই তো নয়ই বরং অবাস্তব। চারদিকে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম। বখাটে স্কুল শিক্ষার্থী, স্কুল পালানো, স্কুল ছেড়ে দেয়া ছেলেপেলেরাই কিশোর গ্যাংয়ের নামে পুরো সমাজকে গিলে খাচেছ। তারা তো এই সমাজেরই বাসিন্দা।তারা চারদিকে যা দেখছে তাই শিখছে। শিক্ষকদের অবস্থান  দুর্বল করতে করতে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে যে, তারা এখন একটি শ্রেণিকক্ষই সামাল দিতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা পড়তে চায়না, পড়তে পারেনা, লিখতে চায়না, লিখতে পারেনা। পড়া দিলে, কোন কাজ করতে দিলে করতে চায়না।বিদ্যালয় ও শিক্ষক স্থানীয় রাজনৈতিক  নেতাদের ভয়ে থাকেন, কারন তাদের ইচেছ অনুযায়ীই স্কুল চলে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা পাস করছে, ক্লাস পার করছে, বিদ্যালয় পার করছে, মহাবিদ্যালয় পার করছে কিন্তু শিখছে না বিষয়, শিখছেনা কোন আদব-কায়দা,নিয়ম-কানুন। এই পুরো বিশৃংখল অবস্থাকে কিভাবে  কিছুট নিয়ম কানুনের মধ্যে, কিছুটা রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধ্যকতার মাধ্যে আনা যায় সেসব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং কাজ করার খুবই প্রয়োজন। এসবের কথা চিন্তা না করে বিশাল এক কারিকুলাম এনে হাজির করেছি, কারা  সেটি বাস্তবায়ন করবেন, কাদের উপর বাস্তবায়ন করা হবে এবং কিভাবে করা হবে সেসব বিষয় একটুও আমরা ভাবিনি। এসব বিষয় চিন্তা করে কিছু করা হলে শিক্ষকগন একটি বিষয় শেখানোর জন্য যে প্রচুর অনুশীলন প্রয়োজন সেই অনুশীলন কিছুটা হলেও করাতে পারতেন। বর্তমান কারিকুলাম এসে শিক্ষার্থীদের আরও অপার স্বাধীনতা দিল, কিছুই করতে হবেনা, কিছুই পড়তে হবেনা শুধু ক্লাস ডিঙ্গাতে হবে। নিজে কিছু লিখে প্রকাশ করার দরকার নেই। কোন কিছু পারার দরকার নেই। একজন শিক্ষক তাকে যেভাবে মূল্যায়ন করবেন সেটিই তার আসল মূল্যায়ন। কারিকুলাম যা যা লেখা আছে তার অধিকাংশই আদর্শিক কথা, অধিকাংশই ইউটোপিয়ান আইডিয়া। 

বিষয়:

শেয়ার করুন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার তথ্য সংরক্ষিত রাখুন

লেখকতথ্য

মাছুম বিল্লাহ

শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এবং প্রেসিডেন্ট: ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইট্যাব)। সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর- ভাব বাংলাদেশ এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞ -ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি। ইমেইল: [email protected]

বিশেষ শর্তসাপেক্ষে এই ওয়েবসাইটটি সামাজিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করা হবে।

নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে অস্পষ্টতা

প্রকাশ: ০২:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নতুন কারিকুলাম চালুর পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছেনা আর এর পেছনে যৌক্তিক কারণও আছে। কারিকুলাম নিয়ে যত আলোচনা হচিছলো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলোচনা হলো পাবলিক পরীক্ষা কিভাবে গ্রহন করা হবে, তার স্বরূপ কি হবে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে  প্রতীকের মাধ্যমে যে মূল্যায়ন সেটি কিভাবে অ্যাডজাস্ট করা হবে। প্রথমেই বলা প্রয়োজন যে, এত বিশাল আকৃতির পরিবর্তন যেখানে করা হলো সেখানে পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে কর্র্তৃপক্ষ খুব একটা চিন্তা যে করেননি সেটি কিন্তু বার বার প্রকাশ পাচেছ। সচেতন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বার বার তুলছেন বিভিন্ন ফোরামে কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা একটি কথাটি শুনে আসছি যে, ফরমাল কোনো লিখিত পরীক্ষা হবে না, সেটির মাধ্যমে যে মূল্যায়ন সেটি সঠিক নয়। লিখিত পরীক্ষা হলেই বাজারে নোট-গাইডের ব্যবসা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু  ফরমাল কোন লিখিত পরীক্ষা না থাকায়  শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করছে না।শিক্ষার্থীরা কোন বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই।  একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাইল্ড বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকতে হয়, পরীক্ষা বা পড়াশুনার অত্যাধিক চাপ নয় তবে এক ধরনের তাগিদের মধ্যে থাকতে হয় কারন এই বয়সে নিজেরা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। তাছাড়া প্রতিযোগিতা যাতে অসুস্থতা সৃষ্টি  না করে সেটিকে কিভাবে পরিমার্জন করে সুস্থ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন ছিল।  আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে মাঠে কাজ করি, শিক্ষা বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করি তারা কিন্তু বারবার বলে আসছি নতুন কারিকুলাম লিখিতভাবে খুবই ভাল কিন্তু বাস্তবের সাথে এর মিল অনেক কম। এই কারিকুলামকে অর্থবহ করতে হলে কমপক্ষে ৫০শতাংশ লিখিত পরীক্ষা থাকতেই হবে। আমরা যতই বলি এর সাথে সংশ্লিষ্টরা  ততই শক্ত অবস্থানে চলে যাচিছলেন যে, লিখিত পরীক্ষা মানে মুখস্থ, লিখিত পরীক্ষা মানে প্রাইভেট পড়া, লিখিত পরীক্ষা মানে নোট-গাইডের ব্যবসা। কোনটিই কিন্তু থেমে নেই, শুধু থেমে গেছে শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ, বইপড়া আর বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ।এমনটি হয়েছে বহু শিক্ষার্থী কোন ধরনের বই দেখে পড়তে পারছেনা, এটি আমি নিজে ঘুরে ঘুরে দেখেছি, দক্ষতা আর যোগ্যতা অর্জন তো দূরের কথা। 

নতুন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচেছ। তিনি নতুন কারিকুলামে মূল্যায়নসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে একাধিক মিটিং করেছেন এনসিটিবি কর্মকর্তাদের সাথে। শিক্ষাবিদ, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ, অসন্তোষ এবং লিখিত পরীক্ষা যুক্ত করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের প্রথম দিনেই তিনি  নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নপদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গত ১৪জানুয়ারি ২০২৪  শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষাবর্ষ মাত্র শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাজগুলোও শুরু হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা মনে হয় , তাহলে পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি  ২০২৪ শিক্ষামন্ত্রী এনসিটিবি এবং শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে  তিনি মূল্যায়ণ পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে জন-অসন্তোষ নিরসনে তা যাচাই বাছাইয়ের পরামর্শ দেন। এরপরই  ফেব্রুয়ারি মাসে  মূল্যায়নপদ্ধতি ও কারিকুলাম নিয়ে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি গঠনের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন কমিটি একটি সুপারিশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা রাখতে হবে এবং এই দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রাখতে বলেছে। তবে,কারিকুলামের উপর বই যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে কতটা সেটি সম্ভব হবে সেটি একটি প্রশ্ন।হাতে-কলমে যে মূল্যায়ণ হবে, তার ওয়েটেজ বা গড় ভারিত্ব হবে ৫০শতাংশ। অন্যদিকে লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৫০ শতাংশ।  চূড়ান্ত মূল্যায়নে সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টের ৭ পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদশির্তার সূচক অভিভাবক ও অংশজনের অবহিত করারও সুপারিশ করেছে কমিটি। এই সাত পর্যায়ের স্কেল সম্পর্কে বিদ্যালয়, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পুরোপুরি অন্ধকারে। কবে সবগুলো আলোর মতো স্পষ্ট হবে সেই আশায়ই সংশ্লিষ্টরা বসে আছেন। ৫০শতাংশ লিখিত পরীক্ষার কথা বলা হলো ২৬ মার্চ ২০২৪, এপ্রিলেও একইকথা চলছে। কিন্তু ১৪ মে ২০২৪ বাংলাদেশের  প্রায় সমস্ত পত্রিকায় দেখলাম ১৩মে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভায় পাবলিক পরীক্ষায় মূল্যায়ন  নিয়ে আলোচনা ও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় যে, নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হতে যাচেছ ৬৫শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫শতাংশ।— কার্যক্রম বলতে বোঝানো হচেছ অ্যাসইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। আরও সহজ করে বললে হাতে-কলমে কাজ।  সেখানে উপস্থিত ছিলেন  ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও এনসিটিবির কর্মকর্তাগন। মাননীয় কর্মকর্তাদের নিকট সবিনয় জানতে চাই যে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন আসলে কোন পদ্ধতিটি অবলম্বন করবেন, তাদের কি আসলেই কনফিউজড হওয়ার কথা নয়?  ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এই ৬৫শতাংশ পরীক্ষার মার্কিং কি রকম হবে। সেটি কি মার্কিংই থাকবে, নাকি গ্রেডিং হবে নাকি নম্বর সিম্বলে রূপান্তরিত করা হবে? এ আলোচনা কিন্তু  দেখলাম সেখানে অনুপস্থিত। আবার এই নিয়ে কথা হবে, কয়েক মাস কেটে যাবে তখন সংশ্লিষ্টরা আবার কিছু  খসড়া সিদ্ধান্ত নেবেন। এভাবে সময় তো বসে থাকছে না। স্কুলগুলোর ও শ্রেণিকক্ষগুলোর বাস্তব অবস্থা জানার জন্য আপনারা একটু গোপনে গিয়ে যদি দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন পড়াশুনার আসলে কি হাল হয়েছে। অনেকে বলছেন যে, এগুলো তো কোন সিদ্ধান্ত নয়, শুধু সময় ক্ষেপন!

যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলাম চালুর পর এ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের যেসব আলোচনা তার সবই লিখিতভাবে অর্থাৎ থিওরিটিক্যালি পজিটিভ, ভীষন পজিটিভ। যেসব কথা পরিকল্পনায় যেভাবে লেখা আছে সেগুলো অবশ্যই সুন্দর, সেটি নিয়ে আমরা কতটা আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে পারি?  আমরা বলছি বাস্তব কথা নিয়ে। লিখিত কোন পরীক্ষাই তারা রাখবেন না। পাবলিক পরীক্ষা কিভাবে হবে সেটি নিয়ে যে কারিকুলামে বা ব্যবস্থায় চিন্তা করা হয়না সেটি যে কত গলদে ভর্তি তার প্রমাণ আমরা বার বার পাচিছ। এখন তারা বলছেন এক ঘন্টার একটি লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে । তবে,  বার বার নিজেদের স্থানটি  ধরে রাখার জন্য বলছেন যে, সেটি আগের পরীক্ষার মতো হবেনা। তারা যতগুলো কথা বলতেন তার মধ্যে একটি ছিল পরীক্ষার কোন টেনশন শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকবেনা। পুরনো কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো অর্থাৎ দশটি বিষয় হলে একজন শিক্ষার্থীকে ত্রিশ ঘন্টার পরীক্ষা দিতে হতো, এখন দিতে হবে প াশ ঘন্টার অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের পাঁচ ঘন্টার পরীক্ষা দিতে হবে। অনেক টেনশনমুক্ত! শিক্ষার্থীরা যখন এসএসসি পরীক্ষার সেন্টারে যাবে তাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেন্টারে থাকতে হবে, এই দীর্ঘ সময় তারা কি খাবেন? কোথায় খাবেন? এ চিন্তা কিন্ত কর্তৃপক্ষ এখনও করেননি। আমার সাথে দু’একজনের কথা হয়েছে। আমি যখন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি  তখন হালকা করে বলা হলো ’ খাওয়ার ব্যবস্থা না হয় করা হবে।’ এতগুলো শিক্ষার্থীর খাবার আয়োজন কে করবে, কিভাবে করা হবে? মূল্যায়নের পরিবর্তে শত শত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর খাওয়ার পেছনে যে আয়োজন ও সময় নস্ট হবে সেটি হতে পারে পিকনিক, কোন মূল্যায়ণ নয়। শুধু তাই নয়, এত শত শত কিংবা হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা পাঁচ ঘন্টা ধরে এক্্রপেরিমেন্ট করবেন, পরীক্ষা দিবেন তাদের সুপারভাইজ করার মতো এতো জনবল কি ঐ সেন্টারের আছে? বিষয়টি কিন্তু আরও এক জায়গায় ধোয়াশা রাখা হলো। পরীক্ষা কি সেন্টারে হবে না পাশ^বর্তী কোন স্কুলে হবে? বোর্ডের পরীক্ষা নিতে হবে, লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে  এসব দাবীর প্রেক্ষিতে  কর্তৃপক্ষের এমন উত্তর। আমরা কিন্তু এখনও স্পষ্ট করে বুঝতে পারছিনা যে,  পাবলিক পরীক্ষা আসলে কোথায় হবে এবং কিভাবে হবে।

প্রথম বলা হলো  পাশের বিদ্যালয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে। পাশের বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হওয়া মানে সেটি কোন মূল্যায়ন নয়। দুই বিদ্যালয়ের মধ্যে যদি রেশারেশি থাকে, শত্রুতা থাকে তাহলে  মূল্যায়ান একরকম হবে, আবার যদি মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যন্ডিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয় সেটিও কোন মূল্যায়ন নয়। বিষয়টি কিন্তু স্পষ্ট করা হয়নি। আবার যখন আলোচনা হলো তখন বলা হচেছ পরীক্ষা হবে সেন্টারে। একটি সেন্টার পরীক্ষার্থী থাকে কয়েক হাজার। প্রতিটি পরীক্ষার্থী যদি ৫ঘন্টা পর্যন্ত পরীক্ষা দেয় তাহলে সেটি মূল্যায়ণ করা বা অবজার করার জন্য এত টিচার কোথায় পাওয়া যাবে? এ চিন্তাও কিন্তু তারা করেনি।প্রথম বলা হলো বিদ্যালয় সবকিছু করবে। তারপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে বোর্ডগুলোর ভূমিকা কি হবে? এসব প্রশ্ন ওঠার পরে তারা বলছেন বোর্ড থেকেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। আবার সাথে সাথে বলা হচেছ পরীক্ষা আগের মতো হবেনা। পুরো বিষয়টিতে কিন্তু গোলমাল লেগে আছে। যখনই তাদের প্রশ্ন করা হয় তখন তারা সাথে সাথে একটি উত্তর দিয়ে দেন , তারা কিন্তু পরিকল্পনা প্রকাশ করার সময় সেগুলো বলছেন না অর্থাৎ এগুলো তাদের চিন্তায় আছে কিনা প্রশ্ন থেকে যাচেছ।  

প্রথম বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিকে ধাপে ধাপে কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ বাড়ানো হবে। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে কার্যক্রমের বিষয়বস্থুর সঙ্গে মিল রেখে অর্থাৎ প্রশ্ন হবে দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রেখে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এখন এনসিটিবি দ্রুত আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করলে এটিকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পূর্বনির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় তোলা হবে।ঐ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময়টি পাাঁচ ঘন্টাই রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাই রাখা হচেছ। তারা কিন্তু পরীক্ষার নামসহ সবই উল্টে দিতে চাচিছলেন  এবং বাস্তবতার কথা অনেকক্ষেত্রে চিন্তা না করে অনেককিছু বলেই যাচেছন, বিদ্যালয় ও শিক্ষার করুণ দশার কথা কিন্তু চিন্তা করছেন না। আমরা জানি দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেটির নাম  ১৯৬২ সাল থেকেই    মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট( এসএসসি) পরীক্ষা নামে পরিচিত।  কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা নিজেদের জায়গাটি ঠিক রাখার জন্য বলেই যাচেছন শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়নের ধরন এখনকার মতো থাকছেনা। কিভাবে থাকছে তাও ঠিকমতো বলছেন না, যা বলছেন তার অনেক কিছুই  বাস্তবের সাথে  মিল নেই, দেশের কনটেস্টের সাথে মিল নেই আর লক্ষ লক্ষ শিক্ষক তো বুঝতেই পারছেনা, তারা তালগোল পাকিয়ে বসে আছেন। 

আন্তর্জাতিক পরীক্ষা  ’ ও’ লেভেল, ’ এ’ লেভেলে’ লিখিত পরীক্ষা আছে, পিসায় লিখিত পরীক্ষা আছে, অন্তর্জাতিক অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ’ আইইএলটিস’–এগুলোর সবকিছুর উপরে উঠে আমাদের কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা বলেই যাচেছন ওগুলো কোন পরীক্ষাই নয়, ওগুলো শুধু ব্যবসা। ২০২৬সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত পরীক্ষা না থাকায় সেটি কোন পদ্ধতিতে হবে তার কাঠামো এখনো ঠিক না হওয়ায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বুঝতে উঠতে পারছেন না।পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক না হওয়ায় দশম শ্রেণির পাঠ্যবই লেখার কাজও আটকে আছে। অথচ ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন পাঠ্যবইয়ে পড়াশুনা করবে।সেটিও দেখছি খুব তাড়াহুড়ো করে করতে হবে। তাড়াহুড়ো করা মানে ভুলের ছড়াছড়ি। এখানে ভাল বা মন্দ নিয়ে কথা নয়, কথা হচেছ আমরা হঠাৎ করে পূর্বের কারিকুলামের পুরোটাই পরিবর্তন কেন করলাম, আমরা কি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ তৈরি করছিলাম না? শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাচিছলেন  না? হঠাৎ করে কেন সমস্ত বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে নতুন ডিজাইনের বিল্ডিং করতে নেমে গেলাম? সব বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বিল্ডিং সেগুলোর চেয়ে অনেক অনেক ভাল হবে সেটি নিজেরাই অনুমান করে নিজেরাই এর প্রচারে নেমে গেলাম কিন্তু একটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টাও না করে নতুন বিল্ডিং হওয়ার অপেক্ষায় সবাইকে রেখে দিলাম। পূর্ববর্তী কারিকুলামে আমাদের প্রয়োজন ছিল প্রশ্নপত্রের ধরন পরিবর্তন করা যাতে শিক্ষার্থীরা নিজ থেকে লিখে ফললাভ করে। আর একটি দরকার ছিল প্রাকটিক্যাল কিছু বিষয় যেগুলো একুশ শতকের স্কিলসের সাথে যায় সে ধরনের কিছু চালু করা। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন  ছিল শিক্ষকদের প্রণোদনা বাড়ানো, বেতন ভাতা বাড়ানোর  দিকে জোর দেয়া এবং যারা ইতিমধ্যে শিক্ষকতায় আছেন তাদের একাডেমিক ও পেডাগজিক্যাল দিকগুলো প্রশিক্ষণ , গবেষণা ও পড়াশুনা করানোর মাধ্যমে উন্নত  করার। আর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হচেছ ( যেমন এনটিআরসি-এর মাধ্যমে নিয়োগ) সেগুলো প্রশংসীয় এবং ধীরে ধীরে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে মজা পায়না সেজন্য শুধুমাত্র শিক্ষকরাই দায়ী নন। এসব জায়গায় কাজ করার দরকার ছিল। এগুলোকে পাশ কাটিয়ে হঠাৎ করে নতুন কারিকুলাম নিয়ে এলাম। যারা এটি বাস্তবায়ন করবেন, যাদের উপর এগুলো প্রয়োগ করা হবে তাদের প্রকৃত অবস্থা ঢাকঢোল না পিটিয়ে  গভীরভাবে ও নিরপেক্ষভাবে  জানার  এবং অবলোকন করার দরকার ছিল। কর্তৃপক্ষ সেেিদক যায়নি। আমরা দেখতে পাচিছ তারা বিষয়টি যেহেতু চালু করেছেন  যে কোন মূল্যে তার বাস্তবায়ন করতেই হবে, তাতে শিক্ষার্থীদের অবস্থা আর শ্কিষার অবস্থা যাই হোক! এর ভাল দিকগুলো তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচেছ। কারিকুলামকে তো আমরা খারাপ বলতে পারিনা। আমাদের দেখতে হবে অনুমিত সিদ্ধান্ত এবং সেগুলোর কথা চিন্তা করেই আত্মতৃপ্তি লাভ করার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার বিষয়টি। ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত একটি শ্রেণিতে তিন-চার পাঁচজন শিক্ষার্থী পড়তে পারে, পড়ে, লিখে, ক্লাসের কাজ করে, বাকীরা তো শ্রেণি অনুযায়ী অনেক পেছনে পড়ে আছে। তাদের প্রয়োজন রেমিডিয়াল ক্লাস, বহু ব্যাকক্লাস।  এ বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়াশোন করছেন তারাই ২০২৬সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তারা এই কারিকুলামে পড়ে কি অর্জন করতে যাচেছন? একটি বিষয় বার বার অনুশীলনের মাধ্যমে কিছু অর্জন করা যায়। কিন্তু  সেই অনুশীলন তো হচেছনা। 

‘লিখিত পরীক্ষা না থাকায় কারিকুলামটি সমালোচানর মুখে পড়ে, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিন্তু তাদের প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা অদ্ভূতভাবে নীরব থাকেন। ফলে শিক্ষাক্রম নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন আছে, পাস-ফেল আছে, প্রতিদিনের পাঠদান আছে, পাঠের পূর্বপ্রস্ততি আছে, আবার শিক্ষককেও ফলাফল দিতে হয়। অর্থাৎ ঠিক নিয়ম মেনে সন্তানকে পড়িয়ে বিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে অভিভাবকদের। সব মিলিয়ে অভিভাবকরা সন্তানের পড়াশোনা সম্পর্কে স্বচছ ধারণা  রাখতে পারবেন। মোটকথা, শিক্ষাক্রম নিয়ে সবার ইতিবাচক ভূমিকা তৈরি হবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টো। অর্থাৎ ‘মূল্যায়ন নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম তালগোল পাকিয়ে আছে, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় এখনও অষ্পষ্টতা, ধোঁয়াশা ও অনুমাননির্ভর অনেক কিছুই করছে।‘এই শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের জন্য আটটি উপকরণ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল, যেমন—-কুইজ, প্রতিবেদন, উপস্থাপন, প্রশ্নোত্তর, ব্যবহারিক, স্বমূল্যায়ন, সহপাঠী মূল্যায়ন ও প্রতিবেশি মূল্যায়ন। অর্থাৎ প্রশ্নোত্তর পর্বের নাম দিয়ে লিখিত পরীক্ষাও ছিল। কিন্তু গত দুই বছরে কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে খুশি রাখতে গিয়ে মূল্যায়নের আটটি অংশের মধ্যেই মাত্র কুইজ, প্রতিবেদন ও উপস্থাপন রেখে বাকি পাঁচটিকেই বাদ দিয়ে দেন। এর ফলে মূল্যায়ন থেকে হাতে-কলমের পরীক্ষা বাদ পড়ে।’ ( ভোরের কাগজ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)

কিছু জাতীয় দৈনিকে   দেখলাম, সাংবাদিকগন বলছেন এনসিটিবির মশিউজ্জামানের প্রশ্ন শুনে হতবাক শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত ও পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। হতবাক হওয়ারই কথা। আমরা ফুটবল খেলা দেখি সেখানে প্রতিযোগিতা আছে, ক্রিকেট দেখি সেখানে প্রতিযোগিতা আছে। এভাবে সব কাজেই প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু নতুন কারিকুলামে আমরা বলছি শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিযোগিতা করবে না। একজন খেলোয়াড় যদি জানে যে, তাকে কোন গোল করতে হবেনা, তাহলে সে কতক্ষন খেলবে? সেই দশা হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীদের। বইয়ে বলা হয়েছে তারা আনন্দচিত্তে সারাদিন বইয়ের কাজ করবে কিন্তু পরীক্ষার চাপ তাদের সইতে হবেনা। একটি বিষয়কে বারবার অনুশীলন করতে হয় বিভিন্নভাবে, লিখে, পড়ে, আলোচনা, উপস্থাপনা , রিপোর্ট রাইর্টি ইত্যাদি করে। কিন্তু এখন যেটি হয়েছে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে অনুশীলন করার সময় পাচেছ খুবই কম। একজন শিক্ষককে বিশেষ করে বড় ক্লাসে ডিসিপ্লিস মেনটেইন করতেই সময় চলে যায়, কখন সে শিক্ষার্থীদের দিকে ব্যক্তিগতভাবে খেয়াল রাখবেন।  এখানে আর একটি কথা হচেছ ,শিক্ষকদের নিজস্ব মূল্যায়ন এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয় শহর থেকে গ্রাম, ছোট শহর থেকে বড় শহর , ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে অপেক্ষাকৃত কম মানের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মূল্যায়ন কখনোই এক হবেনা। আর এটি হবেনা বলেই একটি জাতীয় মানদন্ড থাকতে হয়। বর্তমান কারিকুলাযে যে বিশাল গ্যাপটি রয়েছে তার বহু প্রমাণের মধ্যে এটি একটি বড় প্রমাণ। 

এনসিটিবি থেকে বলা হচেছ গতবার (২০২৩ সালে) আমরা পরীক্ষা নিয়েছি তিনদিনে, নাম ছিল অ্যাসেসমেন্ট উৎসব। শিক্ষার্থীরা প্রথম দিন ইনস্ট্রাকশন পেয়েছে, দ্বিতীয় দিন ডেটা প্রসেস করেছে, তৃতীয় দিন ফাইনাল রেজাল্ট দিয়েছে। তিনটি ভাগে কাজটি করেছে। প্রতিদিন ক্লাস রুটিন অনুযায়ী সেগুলে হয়েছে। তবে, পরে আমরা জানতে পারি, একদিনে একাধিক বিষয়ের কাজ করা বেশ কঠিন হয়। তাই এখন আমরা বলেছি, একদিনে একটি বিষয় নিয়ে কাজ হবে। সেদিন আর অন্য বিষয়ে কাজ হবেনা।তার মানে হচেছ এটিও বিনা পরিকল্পনায় হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের উপর শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালানো হচেছ।’নতুন মূল্যায়ন প্রস্তাবনায় শিক্ষার্থীদের একটি এক্্রপেরিমেন্ট দেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা সকাল দশটায় সেটি শুরু করবে। শেষ সময়ে এক ঘন্টা বা বিষয় অনুযায়ী সোয়া ঘন্টাএর একটি লিখিত অংশ থাকবে। বাকি সময় তারা কাজের মধ্যে যাবে। বিষয়টি আগের মতো তিন ঘন্টার লিখিত পরীক্ষা দেয়ার মতো নয়। আরও বলা হয়, স্কুল যেভাবে মূল্যায়ণ করে সেভাবেই করবে। পাবলিক পরীক্ষায় বাইরের মূল্যায়নকারী অর্থাৎ অন্য স্কুলের শিক্ষক থাকবেন। ২০২৩ সালে  ফাইনাল পরীক্ষা যেভাবে হয়েছে, আগামীতে সেভাবেই হবে এবং অবজারভেশন চেকলিস্ট অনুযায়ী শির্ক্ষাথীদের মূল্যায়ন করা হবে। ফাইনালি তার একটি লিখিত রূপ জমা দেবে।’পাবলিক পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির এই পরীক্ষা হবে নিজ নিজ স্কুলে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পাঁচ ঘন্টায় ছয়টি সেশন হবে। চার ঘন্টা ব্যবহারিক। প্রথমে ওরিয়েন্টেশন দেয়া হবে। এই সেশনে একজন শিক্ষার্থীর দলগতভাবে কাজ করতে হবে। আবার প্রত্যেককে এককভাবে ব্যবহারিক কাজ করতে হবে। মূল্যায়নকারী/শিক্ষকদের কাছে তাদের পারদর্শিতা দেখাতে হবে। শেষ এক ঘন্টা তত্ত্বীয় পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষার উত্তরপত্র মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং উচচ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার মতো পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বোর্ডে পাঠানো হবে। এ বিষয় দুটোও কিন্তু প্রথমে বলা হয়নি, সাংবাদকিগন প্রশ্ন করার পর অর্থাৎ বোর্ডের কি কাজ কিংবা বোর্ড থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করা না হলে স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করা যাবেনা। তখন কর্তৃপক্ষ বোর্ডের কাজের কথা এভাবে ব্যাখ্যা করেছে।নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মার্কিং( চিহ্নিত) করার নিয়ম থাকবে না। রিপোর্ট ভালো, ’ অর্জনের পথে এবং ’ প্রাথমিক পর্যায়’ এমন তিন ভাগে ফলাফল হবে। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মিডটার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষা হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে চূড়ান্ত পরীক্ষার মাধ্যমে। খসড়া অনুযায়ী মিডটার্ম ও বার্ষিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে নতুন কারিকুলামের আলোকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে অন্য কেন্দ্রে। আর চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা হবে নিজ স্কুলে। ২০২৪ সালে জুন থেকে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন হবে স্কুলে। এসব উত্তর যখন সাংবাদিকগন জিজ্ঞেস করেন তখন শোনা যায় অর্থাৎ কংক্রিট কোন সিদ্ধান্ত কিন্তু বিদ্যালয় বা শিক্ষকগন পাচেছন না। 

কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা এখন বলছেন নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নে হাতে-কলমে কাজের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষাও থাকছে। তবে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেওয়া ধরন মুখস্থনির্ভর হবে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, সেগুলো মূলত সৃজনশীল উপায়ে লিখতে হবে। এটি আবার নতুন কি? আমরা তো তাই বলে আসছিলাম যে, শিক্ষার্থীরা যাতে না বুঝে শুধু মুখস্থ করে পাস না করে পরীক্ষায় সেই পদ্ধতিই থাকা প্রয়োজন। আর কারিকুলাম সংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন, লিখিত কোন পরীক্ষা থাকবেনা কারণ সেটি হলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়ণ নাকি হয়না। তারা বলছেন বিভিন্ন শ্রেণিতে বছরজুড়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকবে। এর পাশাপাশি বছরে দুটি সাগগ্রিক মূল্যায়ন হবে। অধিকাংশ শিক্ষক এবং বিদ্যালয় কিন্তু এখনও এই দুই মূল্যায়নের মধ্যে প্রকৃত তফাৎ বুঝতে পারছেন না। 

সবশেষে বলা যায় যে, বর্তমান কারিকুলামটি আদর্শিক, অতি আদর্শিক। আমাদের বর্তমান যে, শিক্ষার প্রেক্ষাপট সেটির আলোকে এটি মানানসই তো নয়ই বরং অবাস্তব। চারদিকে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম। বখাটে স্কুল শিক্ষার্থী, স্কুল পালানো, স্কুল ছেড়ে দেয়া ছেলেপেলেরাই কিশোর গ্যাংয়ের নামে পুরো সমাজকে গিলে খাচেছ। তারা তো এই সমাজেরই বাসিন্দা।তারা চারদিকে যা দেখছে তাই শিখছে। শিক্ষকদের অবস্থান  দুর্বল করতে করতে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে যে, তারা এখন একটি শ্রেণিকক্ষই সামাল দিতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা পড়তে চায়না, পড়তে পারেনা, লিখতে চায়না, লিখতে পারেনা। পড়া দিলে, কোন কাজ করতে দিলে করতে চায়না।বিদ্যালয় ও শিক্ষক স্থানীয় রাজনৈতিক  নেতাদের ভয়ে থাকেন, কারন তাদের ইচেছ অনুযায়ীই স্কুল চলে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা পাস করছে, ক্লাস পার করছে, বিদ্যালয় পার করছে, মহাবিদ্যালয় পার করছে কিন্তু শিখছে না বিষয়, শিখছেনা কোন আদব-কায়দা,নিয়ম-কানুন। এই পুরো বিশৃংখল অবস্থাকে কিভাবে  কিছুট নিয়ম কানুনের মধ্যে, কিছুটা রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধ্যকতার মাধ্যে আনা যায় সেসব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং কাজ করার খুবই প্রয়োজন। এসবের কথা চিন্তা না করে বিশাল এক কারিকুলাম এনে হাজির করেছি, কারা  সেটি বাস্তবায়ন করবেন, কাদের উপর বাস্তবায়ন করা হবে এবং কিভাবে করা হবে সেসব বিষয় একটুও আমরা ভাবিনি। এসব বিষয় চিন্তা করে কিছু করা হলে শিক্ষকগন একটি বিষয় শেখানোর জন্য যে প্রচুর অনুশীলন প্রয়োজন সেই অনুশীলন কিছুটা হলেও করাতে পারতেন। বর্তমান কারিকুলাম এসে শিক্ষার্থীদের আরও অপার স্বাধীনতা দিল, কিছুই করতে হবেনা, কিছুই পড়তে হবেনা শুধু ক্লাস ডিঙ্গাতে হবে। নিজে কিছু লিখে প্রকাশ করার দরকার নেই। কোন কিছু পারার দরকার নেই। একজন শিক্ষক তাকে যেভাবে মূল্যায়ন করবেন সেটিই তার আসল মূল্যায়ন। কারিকুলাম যা যা লেখা আছে তার অধিকাংশই আদর্শিক কথা, অধিকাংশই ইউটোপিয়ান আইডিয়া।