কেমন চলছে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন?
মূল্যায়ন বিষয়টি পুরোটাই অষ্পষ্ট, অযথাই জটিল থেকে জটিলতর করা হচ্ছে। কেন করা হচ্ছে আমাদের বুঝতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মূল্যায়ন বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে।
- প্রকাশ: ০৯:১৭:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
- / ১০৭ বার পড়া হয়েছে
কেন্দ্রীয়ভাবে এনসিটিবি থেকে শিক্ষার্থী নির্দেশিকা বা প্রশ্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে জুলাই মাসের ০৩ তারিখ থেকে। বিষয় ও শ্রেণিভেদে খাবার বা টিফিনের বিরতি দিযে চার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘন্টায় হচ্ছে এ মূল্যায়ন। যেমন অষ্টম ও নবম শ্রেণির জন্য পাঁচ ঘন্টা এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য হচ্ছে চারঘন্টার মূল্যায়ন। মাসব্যাপী চলবে মূল্যায়ন কার্যক্রম।পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ ২ তারিখ রাতে ও ৩ তারিখ সকাল বেলা এনসিটিবির প্রশ্নপত্র বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরও ছড়ানো হয় বিভিন্ন নামে, বেনামে । সেই পুরনো ঘটনা! শিক্ষার্থীরা যদি প্রশ্ন এভাবে সামাজিক মাধ্যমে পেয়ে যায় তাহলে তারা তো পড়ার টেবিলে বসবেনা, শ্রেণিকক্ষের কার্যাবলিতে অংশগ্রহন করবেনা—এই মন্তব্য অনেকেই করেছেন এবং আমরাও বুঝি কারণ ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত আসছে না। যদিও এনসিটিবি থেকে বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও বড় কোন সমস্যা নেই কারণ প্রশ্ন যেভাবে হয়েছে তাতে মুখস্থ লেখার কিছু নেই। বিষয়টি ঠিক কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, যারা প্রশ্নপত্র আগেই পেয়েছে এবং যারা পায়নি—এই দু’ গ্রপের অবস্থা কী এক রকম হবে? যাই হোক প্রশ্ন যাতে আগেভাগেই ছাপা না হয় এবং এভাবে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এনসিটিবি থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনই প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে, উত্তর পাওয়া যাচ্ছে এবং এখন এনসিটিবি থেকে বলা হচ্ছে প্রশ্ন লুকোনো কোন ব্যাপার না, আর শিক্ষার্থীরা যেহেতু মুখস্থ কিছু লিখবেনা তাই প্রশ্ন আগে থেকে পাওয়া গেলেও কোন লাভ নেই। এই উত্তরের বিপরীতে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশি এক শিক্ষক একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন, প্রশ্ন শিক্ষার্থীরা আগে থেকে পেলে যদি কোন সমস্যা নাই হয় তাহলে পরীক্ষার হলে পরীক্ষা নেয়া এবং শিক্ষকদের সেখানে থাকার তো কোন প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে উত্তর চাইলেই তো হয়।
শিক্ষার্থীরা গ্রুপে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা যারা জীবনের একটি বড় অংশ শিক্ষক প্রশিক্ষণে কাটিয়েছি তারা এই গ্রুপ ওয়ার্কের মাহাত্ম জানি। গ্রুপ ওয়ার্ক শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের জড়তা দূর করে, সহযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি করে, সহমর্মিতা চর্চা করার সুযোগ দেয় এবং কথা বলার দক্ষতা বাড়ায়। কিন্তু গ্রুপ ওয়ার্কে সব সময়ই দেখা যায় যারা ভাল পারফরমার তারাই পুরো বিষয়টিকে নিজেদের দখলে রাখে অর্থাৎ অন্যান্য সহপাঠী বা সহকর্মীদের উপর কর্তৃত্ব ফলায়। যারা একটু দুর্বল তারা কোন ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহন করেনা। ফলে দুর্বল আরও দুর্বল হয় কারন তাদের নিজেদের কিছু করতে হয়না না,সহজেই ফাঁকী দেয়া যায়। গ্রুপে যারা এক্্রট্রোভার্ট তারাই সবকিছু করে। তারপরেও শ্রেণি কার্যক্রম কিংবা প্রশিক্ষণের একটা অংশ জুড়ে গ্রুপ ওয়ার্ক করাতে হয়। সেটি পুরো অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন এবং দোষত্রুটি ধরার ক্ষেত্রে অবদান রাখেনা। আর বড় ক্লাস হলে তো কথাই নেই। মূল্যায়ন হচ্ছে একটি শ্রেণিতে একশতের কম-বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে, সেখানে কী হচ্ছে সহজেই অনুমেয়। আর একটি বিষয় হচ্ছে আমরা অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে যত বেশি কথা বলি, শেখানো নিয়ে কিন্তু তত কথা বলছি না। আমরা আসলে কী অ্যাসেসমেন্ট করব! দক্ষতা তো দুরের কথা আশি থেকে নববই শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে বই দেখে পড়তে পারছেনা, এই চিত্র সরকারি বেসরকারি, গ্রাম শহর সর্বত্র । এখানে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন।এটিকে আমরা কোনভাবে এড়িয়ে যেতে পারিনা। এটিই প্রকৃত চিত্র!
ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা বিষযের মূল্যায়নের প্রশ্নপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। অনুষ্ঠানের এক অংশে থাকবে আলোচনা সভা, আরেক অংশে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। টেবিলে টেবিলে ভাগ হয়ে আলোচনার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরাউত্তর লিখবে। এর ভিত্তিতে অনুষ্ঠানটি কীভাবে আয়োজন করা হবে, সেটি নিয়েই মূলত মূল্যায়নের প্রশ্নগুলো বা কী কী করতে হবে, তা সাজানো হয়েছে। এতে তিনভাগে মূল্যায়ন কার্যক্রমটি করতে বলা হয়। প্রথম কাজ হিসেবে এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জোড়ায় আলোচনার ভিত্তিতে কাজগুলো করতে বলা হয়। যেমন, এ অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। প্রথমে নিজে নিজে একটি তালিকা করে খাতায় লিখতে হবে। এরপর জোড়ায় থাকায় সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কোন ব্যক্তি খুঁজে পেলে তা খাতায় লিখতে বলা হয়। সর্বশেষ দুটি তালিকা একসঙ্গে করে একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। তারপর এই তালিকা থেকে যে কোন একজন ব্যক্তির নাম বাছাই করতে হয়। বাছাই করা ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথনের নমুনা তৈরি করতে হবে। তাতে সর্বনাম অনুযায়ী ক্রিয়া শব্দের মর্যাদা বজায় রাখতে হবে। এ ছাড়া তাতে বিবৃতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক বাক্য ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয় কাজ হিসেবে শিক্ষার্থীরা কিভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে চায়, তা নিয়ে একটি ছোট ( ১০০ শব্দের মধ্যে) অনুচ্ছেদ লিখতে বলা হয়। অনুচ্ছেদেও অন্তত পাঁচ শ্রেণির শব্দের ব্যবহার থাকতে হবে। এ ছাড়া অন্তত পাঁচ ধরনের যতিচিহ্নের ব্যবহার থাকতে হবে। এর ভিত্তিতে আরও কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বিপরীত্ শব্দ, প্রতিশব্দও জানতে চাওয়া হয়েছে। তৃতীয় কাজ হিসেবে বলা হয়, এই অনুষ্ঠান আয়োজন ঘিরে সাইনবোর্ড, পোষ্টার, ব্যানার, আমন্ত্রণপত্র কিংবা বিজ্ঞাপনের মধ্য থেকে যেকোন একটি নমুন লিখে খাতায় তৈরি করতে । কাজটি হবে একটি দলীয় কাজ। পাঁচজনের দলে কাজটি হবে। ভাল বিষয়টি হচ্ছে যে, না বুঝে মুখস্থ করে লেখার সুযোগ কম তবে দেখাদেখি করে লেখার সুযোগ অবারিত, যে সুযোগ শিক্ষার্থীরা হাতছাড়া করতে রাজী নয় এবং করেও নি। শিক্ষকরা তাই বলেছেন। শিক্ষকরা যখনই বলছেন যে, দেখে লিখছ কেন, উত্তর হচ্ছে স্যার/ম্যাডার আমরা আলোচনা করছি। গ্রুপ ওয়ার্কের ক্ষেত্রে এটিই হয়। এটি প্রকৃত অ্যাসেসমেন্টের সাথে যায় না।
ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজির প্রশ্ন:
Suppose, you are a member of the reading club at your school. You often meet your classmates to read and discuss books, magazines, newspapers etc. You and your classmates have just finished reading a newspaper article on ‘Living Green’. You are inspired and have decided to start a green movement. For that you have to complete the following task.
Task-1: Get into groups of four and discuss what you may do to keep your community green. Note down the main points of your discussion.
Task-2: For your better understanding, another important article on ‘ Going Green’ is given here. Now read the article individually and complete the activity.
এখান থেকে ৫ টি ধফলবপঃরাব ও ৫ টি হড়ঁহ বের করতে বলা হয়েছে। গ্রামারের পরীক্ষা এভাবে খারাপ না। এলাকায় গিয়ে কোন লোকের সাথে প্রশ্ন করে জানতে হবে তার এলাকার সবুজায়ন করতে কী কী করা লাগতে পারে। এটিও ভাল।করহফহবংং নামে একটি কবিতা দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে রাইমিং ওয়ার্ড বের করতে বলা হয়েছে, কবিতাটি যদিও ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে নেই তারপরেও এটি ভাল। শিক্ষার্থীরা রাইমিং ওয়ার্ড তাদের বইয়ের কবিতা থেকে জানবে এবং অন্য একটি কবিতা থেকে সেটি বের করবে।
আমাদের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ বিশ শতাংশ ছাড়া ইংরেজি বই দেখে পড়তে পারেনা। শব্দ গুলো চেনেনা। তারা কী প্রশ্ন করবে? মুখ দিযে একটি শব্দও বের করেনা। এটি কারুর দোষ নয় বা এই কারিকুলামের দোষ নয়। এটি ট্রাডিশনালি চলে আসছে। তারপর শিক্ষার্থীদের যেহেতু জানার বা পড়ার আগ্রহ নেই তাই ঠিকমতো ক্লাসেও আসেনা। ফলে, শিক্ষকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এই বিষয়গুলোতে আমাদের কাজ করার দরকার ছিল। কিন্তু ইংরেজির বাংলা লিখে দিয়ে ইংরেজি শেখানো যায়না আর ইএলটি-র নিয়মানুযায়ী শিক্ষার্থীদের জোড়ায় জোড়ায় আলোচনা করা, গ্রুপে আলোচনা করার বিষয়টিও বেমানান কারন তারা মুখ দিয়ে একটি ইংরেজি শব্দও বের করতে চায়না। কিসের জোড়ায় আলোচনা । এটি করেন যাদের বাস্তব ক্লাস সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তারা শুধু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইএলটি এক্্রপার্টগন যেভাবে বইয়ে লিখে দিয়েছেন হুবহু সেটি অনুসরণ করার জন্য বলেন, কিন্তু যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় এবং ইংরেজি পড়তে পারেনা তাদের ক্ষেত্রে কী করতে হবে এ ধরণের চিন্তা বা প্রকৃত গবেষণা আমাদের দেশে ইংরেজি নিয়ে যারা ডিল করেন, তারা করেন না।তারা নির্ভর করেন শুধুমাত্র বিদেশি বিশেষজ্ঞগণ যা বলেছেন তার ওপর। ফলে ইংরেজিতে শিক্ষার্থীদের যে অবস্থা সেখান থেকে কোন উন্নয়ন তােেদর ঘটেনি, দুচারজন ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীরা ছাড়া যারা বাসায় এবং নিজ চেষ্টায় কিছু একটা করে।
পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার্থীরা বলছে, ‘আমরা যা পড়েছি তা আসবে কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। শিক্ষকরাও তাদের কাছে বিষয়টি ভালভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন না। কারণ তারাও নাকী এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন জানেন না। পরীক্ষায় বসলে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা মিলবে।’ এটিই গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট যে শিক্ষকরা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন জানেন না। শিক্ষকরা কী করবেন? এতো নির্দেশনা, এত পরিবর্তন, এত বারবার ট্রাক চেঞ্জ, শিক্ষকদের তো খেই হারিয়ে ফেলারই কথা! তারা দেখলাম অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এই বলে যে, যা হবার তাই হবে, আমাদের এত চিন্তা করে লাভ কি? কথা ছিল ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে, সবই করবেন শিক্ষকরা। কিন্তু ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন শুরু হওয়ার পর দেখা গেল শিক্ষক তো দূরের কথা বোর্ডের হাতেও পরীক্ষা নেই। পুরোপুরি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্ন করা হলো। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের টেনশন শুরু হলো এনসিটিবি থেকে প্রশ্ন আসবে, কী প্রশ্ন হবে, কী ধরনের হবে সবার আগ্রহের শীর্ষবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।আমরা আশা করেছিলাম যে, বোর্ডের নির্দেশনায় বিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা পরিচালনা করবে এবং বোর্ডকে নির্দেশনা দিবে এনসিটিবি। বোর্ডগুলো দেখলাম এখানে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। প্রশ্নের ধরন বোর্ডকে এনসিটিবি জানাবে, বোর্ড বিদ্যালয়ে সেই ধরন সরবরাহ করবে, শিক্ষকগন বইয়ের বিভিন্ শিখন অভিজ্ঞতা থেকে মূল্যায়ন করবেন। সব বোর্ড এখন এনসিটিবিতে! আর পুরো বিষয়টি করা হলো শেষ মূহুর্তে হুরোহুরি করে।
শিক্ষকরাই বা করবেন ? পরীক্ষায় কী আসবে তারা জানেনা, কী ধরনের প্রশ্ন হবে তারা জানেননা। পরীক্ষায় কী আসবে না আসবে এই টেনশন তো ছিল পুরাতন কারিকুলামে।এখন তো হাসতে হাসতে পরীক্ষায় বসার কথা ছিল কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে এত টেনশন কেন? কারণ প্রশ্ন নিয়ে এক ধরনের সাসপেন্স তৈরি করা হয়েছে যা আগের টেনশনের চেয়ে কম নয়। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করল তা হলো তাদের বই পুস্তক পড়ার তেমন দরকার নেই, ক্লাস করারও কোন প্রয়োজন নেই। নিজের কোন বিষয় যে ভালভাবে জানতে হবে তারও দরকার নেই। কারণ গ্রুপে বসে দু’একজন যা করছে সবাই তা লিখলে বা সেভাবে লিখলেই তো হয়। এত টেনশন, এত ক্লাস, এত অনুশীলনের কী প্রয়োজন? অ্যাসেসমেন্ট বা মূল্যায়ন হচ্ছে একটি সিরিয়াস বিষয়, এটি হাসি খেলার বিষয় নয়। এই পদ্ধতিতে মূল্যায়নের গুরুত্ব হারিয়ে গেল। বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যদি বলা হয় তোমরা মাঠে দৌড়াদৌড় কর, একটি পাতা ছিড়ে নিয়ে আস এবার বাড়ি যাও। তাতেও কিন্তু তাদের অনেক আনন্দ। কষ্ট করে, পরিশ্রম করে একটি ভাষা শেখা কিংবা বিজ্ঞানের সালোক সংশ্লেষণ শেখা নিয়ে তারা ভাববে না, তাদের অধিকাংশেরই সেই বোধ নেই এবং যারা দুর্বল তাদের তো নেই-ই। শুধুমাত্র যারা পারিবারিকভাবে এবং প্রাকৃতিকভাবে সিরিয়াস তারা শুধুমাত্র ঐসব কাজে আনন্দ পাবেনা, তারা বিষয়গুলো জানতে চায়, প্রাকটিস করতে চায়। তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। তাদের কাছে পরীক্ষা, কারিকুলাম, ক্লাস তা সে যেভাবেই হোক বিষয়গুলো জানার বিভিন্ন চেষ্টা তারা করে থাকে এবং থাকবে কিন্তু বিশাল অংশের শিক্ষার্থী যারা বই ধরতে চায়না, পড়তে চায়না, কোনকিছু অনুশীলন করতে চায়না, পড়তে পারেনা, কোনরকমে ক্লাস পার করলেই হয় এই ধরনের মূল্যায়ন তাদের জন্য হয়েছে পোয়াবারো!
আমরা কারিকুলাম বুঝিনা, এর পক্ষ বিপক্ষ বুঝিনা। আমরা বুঝি শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে আসবে, নতুন নতুন বিষয় শিক্ষকরা শেখাবেন, আগ্রহ নিয়ে, আনন্দ নিয়ে। শিক্ষার্থীও আনন্দ পাবে। আর যে বিষয়গুলোগুলো শিখবে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সেগুলোর প্রাকটিক্যাল করবে সেটি ল্যাবরেটরিতে হোক, প্রকৃতির কাছে গিয়ে হোক, বাজারে ও রাস্তায় গিয়ে হোক, বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করে হোক, পানিতে নেমে হোক। প্রাকটিক্যাল ছাড়া বাকী বিষয় কতটা বুঝেছে তা ভাষায় প্রকাশ করবে লিখে। লিখবে মাতৃভাষায়, লিখবে ইংরেজিতে ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। আর এ দুটো ভাষা শেখার জন্যই প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলনের অবারিত সুযোগ থাকতে হবে শ্রেণিকক্ষে, বাসায় এবং অনুশীলন ঠিকমতো হয়েছে কিনা তার পরীক্ষা থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা যে কোন বিষয়ই পড়ুক তা ভাষায় সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে হবে লিখে, যা অনেক শিক্ষার্থী ভাষার দুর্বলতার জন্য পারেনা। তারা নোট-গাইড বা অন্যের লেখা থেকে লিখতো। আর প্রাকটিক্যালি করে দেখাতে হবে সে কোন বিষয় কতটা বুঝেছে। দুটোতেই নম্বর থাকবে তা না হলে কোনটিই যথাযথ গুরুত্ব পাবেনা।
পুরো শিক্ষক সমাজ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত জানতো না তাদের বিষয়জ্ঞান, দক্ষতা ও যোগ্যতা কিভাবে যাচাই করা হবে। যখন করা শুরু হলো সেটি কী লিখিত না কার্যক্রমভিত্তিক, সেটি কী গ্রেডে না নম্বরে প্রকাশ করা হবে কেউ ঠিকভাবে বলতে পারছেনা। বলা হলো ৬৫ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা হবে, ৩৫ শতাংশ বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি বেজড হবে। অন্তত নবম শ্রেণির জন্য তো বটেই কারণ তারাই নতুন কারিকুলামের প্রথমবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, তাদের কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে এই মূল্যায়নের মাধ্যমে এবং নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাই করবে। পুরো বিষয় যে কত অগোছালো, কতো অপরিকল্পিত তার প্রমাণ অহরহ বের হচ্ছে। যখনই কোন সমস্যা অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের চোখে ধরা পড়ে, তখনই এনসিটিবি তার একটি উত্তর বের করে।তাতে প্রমাণ হয় যে, আগে থেকে তাদের কোন চিন্তা বা প্রস্তুতি থাকেনা। মূল্যায়ন বিষয়টি পুরোটাই অষ্পষ্ট, অযথাই জটিল থেকে জটিলতর করা হচ্ছে। কেন করা হচ্ছে আমাদের বুঝতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। মূল্যায়ন বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে।
পুরো দেশ কিশোর গ্যাংয়ে ছেয়ে যাচ্ছে। ভয়ংকর কিশোর গ্যাং, যারা রাস্তায়, পাড়ায় মহল্লায়, ফেরিঘাটে, বাসস্টণ্ডে সব জায়গায় মানুষকে হত্যা করছে। এটি সমাজের নতুন বাস্তবতা। কিশোরদের বাসায় ধরে রাখা যাচ্ছেনা, বিদ্যালয়ে ও শ্রেণিকক্ষে ধরে রাখা যাচ্ছেনা। তারা কিভাবে ক্লাসমুখী হবে, পড়াশুনামুখী হবে,সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে সেই বিষয়ে চিন্তা, গবেষনা ও কার্যপ্রণালী দরকার। শুধু শিক্ষকদের দোষ দিলে হবে না। এখানে শিক্ষক, অভিভাবক, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশাল দায়িত্ব। সবাইকে সম্মিলিতভাবে সব ধরনের কিশোর শিক্ষার্থীদের পড়াশুনামুখী, ক্লাসমুখী করতে হবে।
কিন্তু আমরা এসব বাস্তবতা চিন্তা না করে শুধু বলে যাচ্ছি শিক্ষার্থীরা আনন্দের মাধ্যমে শিখবে। কে দিবে আনন্দ, কী দিয়ে আনন্দ দিবে, কীভাবে আনন্দ দিবে? যে ব্যবস্থা করেছি তাতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আসার কোন তাগিদ বা প্রয়োজন হচ্ছেনা, না আসলে শিক্ষক কিছুই বলতে পারছেন না, প্রতিষ্ঠান কিছু করতে পারছে না। শুধু নির্দেশনা দিলে হবে না। প্রভাবশালী এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদদের ছেলেমেয়েরা যদি শ্রেণিকক্ষে না এসে পরবর্তী ক্লাসে যেতে চায়, সেটি ফিরিয়ে রাখার কোন ব্যবস্থা কী এই সমাজে আছে? কী বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে সেটি এনসিটিবির কর্মকর্তাগণ কেন বুঝতে চাচ্ছেন না, তা আমাদের বুজে আসেনা। এই বয়সের তরুণদের অনেককিছু বুঝার বয়স হয়নি, অবশ্যই শিক্ষক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সেসব বিষয়ে অনেক দায়িত্ব নিতে হবে, কিছু টা বাধ্যবাধকতরার মধ্যে রাখতে হয়। তারা আনন্দের মাধ্যমে শিখবে এই কথা বলে ছেড়ে দিতে পারিনা।আমরা কোনো বাস্তবতাকেই যেন গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি না। কেন দিচ্ছিনা তাও বুঝতে পারছিনা!