বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়ন: “তিন শূন্য” নিয়ে নতুন যুগের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়ন এবং "তিন শূন্য" ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। ড. ইউনূসের দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণের শূন্যতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নতির সম্ভাবনা এবং দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
- প্রকাশ: ০৪:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
- / ৪৪ বার পড়া হয়েছে
বর্তমান বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ২০১৭ সালের গ্রন্থ A World of Three Zeros এ দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণের শূন্যতার পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একমাত্র দক্ষতা উন্নয়নই দেশের উন্নতি এবং বিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। বাংলাদেশও সেই পথেই চলতে পারে, যদি দেশটির বিশাল কর্মক্ষম জনগণের দক্ষতা উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ: সম্ভাবনার দেশ
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম, এবং এখানকার বিপুল সংখ্যক তরুণ জাতির শক্তি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। আক্ষরিক অর্থে তিনটি শূন্যকে বাস্তবায়িত করতে হলে, প্রয়োজন হবে দক্ষ জনশক্তি তৈরির একটি শক্তিশালী পরিকল্পনা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস, তার ভূগোল, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে উন্নতির অসীম সম্ভাবনা। বর্তমানে, আমাদের দেশে কর্মক্ষম জনগণের সংখ্যা বছরে প্রায় ২৫ লাখ বাড়ছে, যা আগামী দশকে ১২ কোটি জনশক্তি নিয়ে পৃথিবীর অন্যতম কর্মক্ষম দেশ হিসেবে পরিচিত হতে পারে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশের তরুণ জনগণ যদি দক্ষতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারে, তবে দেশের অর্থনীতি সামনের দিকে এক নবদিগন্ত খুলতে পারবে।
কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার
বর্তমান সময়ে, বিশ্বব্যাপী দক্ষ শ্রমশক্তির চাহিদা বাড়ছে। উন্নত দেশগুলো, যেমন আমেরিকা, জার্মানি, এবং জাপান, তাদের শ্রমবাজারে বিদেশি শ্রমিকদের সুযোগ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের জন্যও এটি একটি বড় সুযোগ হতে পারে, যদি দেশে দক্ষতা উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৬ লাখ ভারতীয় ও ৫ লাখ শ্রীলঙ্কান নাগরিক কাজ করছেন, যা দেশের দক্ষ শ্রমশক্তির ঘাটতির প্রমাণ।
আমাদের লক্ষ্য হতে পারে, প্রতিটি বছর ১০ লাখ কর্মী বিশ্ব বাজারে পাঠানো এবং ১০০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করা। শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, বিদেশি শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ করতে হলে, আমাদের শীঘ্রই দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে হবে।
দক্ষতা উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন
দক্ষতা উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। দক্ষ শ্রমশক্তি, উন্নত প্রশিক্ষণ, এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নের দিকে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা ও আইনি জটিলতা এখনও সমস্যার সৃষ্টি করছে। এই ক্ষেত্রে, দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে আমাদের দক্ষতা উন্নয়ন পরিকল্পনাকে যুগোপযোগী করে তোলা দরকার।
এ জন্য প্রয়োজন দক্ষতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সক্রিয় ভূমিকা, আইনি সংস্কার, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা উন্নয়ন। সরকারের পাশাপাশি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে আরও বেশি অংশ নিতে পারে।
গণ-অভ্যুত্থান এবং এক নতুন দিশা
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের একটি নতুন রাজনৈতিক দিশা তৈরি করেছে। তরুণরা এখন একটি নতুন স্বপ্ন দেখে—একটি বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ। শিক্ষিত বেকারত্ব, গৃহহীনতা, এবং সামাজিক বৈষম্য প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী দক্ষতা উন্নয়ন পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম যদি দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, তবে তা দেশের জাতীয় উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। দেশটির প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য পরিচিত, তার নেতৃত্বে যদি দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী জাতীয় পরিকল্পনা গৃহীত হয়, তবে বাংলাদেশ ‘তিন শূন্য’র দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের সাফল্যের চাবিকাঠি। একমাত্র দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে। সুতরাং, এখনই সময় দক্ষতা উন্নয়নের অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার।